সিভিল ঠিকাদারের চুক্তিপত্র


    ঠিকাদারের চুক্তিপত্র : 

    ভবন নির্মাণে প্রথম যে প্র্যাকটিকাল কাজের নাম আসে তা হল “সিভিল” অর্থাৎ মাটি খনন, ইট, বালি, ঢালাই, গাঁথনী ও প্লাস্টারের কাজ । কিন্তু অনেক ক্ষেএেই দেখা যায় যে কাজের পূর্বে আমরা মৌখিক ভাবেই কথা বলে ঠিকাদারকে কাজে হাত দিতে বলি । ফলসূতিতে পরবর্তীতে কাজের সময়, গুনাগুন ও বিল প্রদানের ক্ষেএে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয় । আর এর মূল কারণ হলো ঠিকাদারের সাথে কোন প্রকার লিখিত চুক্তি সম্পন্ন না করা । কাজে হাত দেওয়ার পূর্বে যদি ঠিকাদারের সাথে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করা থাকে তাহলে পরবর্তীতে সকল প্রকার ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হয় । সে জন্য পাঠকের সুবিধার্থে নিচে “সিভিল” কাজের ঠিকাদারের সাথে কিভাবে চুক্তি সম্পূর্ণ করতে হবে তার একটি নমুনা তুলে ধরা হল :                                                                                                                                                                                                                                                                            চুক্তিনামা : সিভিল কাজের

    প্রথমপক্ষ (নিয়োগদাতা) : সততা বিল্ডিং কন্সট্রাকশন : সরিষাবাড়ি, জামালপুর; এর পক্ষে প্রকৌশলী সাজেদুল হক , প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার

    দ্বিতীয় পক্ষ ( কন্ট্রাকটর) : মেসার্স বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারর্স সল্যুশন , ৪৩২১০ হাতিরপুল, ঢাকা, এর পক্ষে স্বত্বাধিকারী …

    এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, সততা বিল্ডিং কন্সট্রাকশন এর , মদিনা টাওয়ারের, ২টি বেজমেন্ট এবং ১৩ তলা ভবনের “সিভিল” নির্মাণ কাজসহ এর অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ নিম্নে উল্লেখিত শর্তে আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে চুক্তি নামা তৈরি করা হলো ।

    কাজের শর্ত সমূহ :

    ১) কাজ শুরু করতে হবে চুক্তিনামা গ্রহনের সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ।

    ২) ঠিকাদার কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন : কোদাল, বেলচা, তাগারি, বালতি, সাবল, রড কাটার মেশিন, জি.আই.তার, মিক্সার মেশিন ইত্যাদি সরবরাহ করবে ।

    ৩) ঠিকাদারকে নিজ খরচে প্রয়োজনীয় মালামাল গোডাউন/সংরক্ষিত স্থান থেকে নিয়ে কাজ করতে হবে, এ ক্ষেএে সর্বোচ্চ দুরত্ব হবে ১৫০ ফুট কিন্তু দুরত্ব এর বেশি হলে ঠিকাদারের সাথে আলোচনা করে মালামাল বহনের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।

    ৪) ঠিকাদারের কাজের গুনাগুন ও ধরণ এবং কোয়ালিটি যদি মানসম্মত না হয় কিংবা ঠিকাদার চুক্তির কোন অংশ ভঙ্গ করেন অথবা কাজ করতে অপরাগ বা ব্যর্থ হন অথবা অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেন অথবা ডিজাইন অনুসরন না করে কাজ করেন তাহলে কতৃপক্ষ তার কাজের কার্যাদেশ বাতিল করে তার জমাকৃত সিকিউরিটির টাকা বাজেয়াপ্ত করবেন । এ ক্ষেএে কোন প্রকার আবেদন বা দাবী গ্রহনযোগ্য হবে না । তবে কতৃপক্ষ চাইলে বিষয়টির ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবেন যা এই চুক্তি পএে উল্লেখ করা হয়নি ।

    ৫) কাজ চলাকালীন প্রতিটি কার্য দিবসে ঠিকাদারকে অবশ্যই কাজের স্থলে উপস্থিত থাকতে হবে এবং তার প্রত্যক্ষ তদারকীতে তার শ্রমিকগন কাজ করবেন । কিন্তু কোন কারণে যদি ঠিকাদার কাজের স্থলে উপস্থিত থাকতে না পারেন তাহলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে এবং প্রজেক্ট ইন্জিনিয়ারকে তা অবগত করতে হবে । এ ক্ষেএে ঠিকাদার তার অনুপস্থিতিতে প্রজেক্টের কাজ দেখাশুনার জন্য একজন সুপারভাইজার নিয়োগ দিবেন যিনি সাইট ইন্জিনিয়ারের অধীনে সকল কাজ পরিচালনা করবেন ।

    ৬) কোম্পানী বা প্রজেক্ট/সাইট ইন্জিনিয়ার কতৃক যদি কোন মিটিং ডাকা হয় তাহলে ঠিকাদারকে অথবা তার মনোনীত সুপারভাইজারকে অবশ্যই ঐ মিটিংএ উপস্থিত থাকতে হবে ।

    ৭) সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসাবে ঠিকাদারের গ্রহনকৃত প্রতিটা বিল থেকে সর্বমোট বিলের ৫% (শতকরা পাঁচ ভাগ) কেটে রাখা হবে, যা ঐ কাজের (বিল প্রদানকৃত) সকল ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের ছয় মাস পর ফেরৎ দেওয়া হবে । তবে এখানে উল্লেখ্য যে যদি বিল প্রদানকৃত কাজের সকল ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের পর ঐ জমাকৃত টাকার কোন অংশ বাকী না থাকে তবে তা আর ফেরৎযোগ্য হবে না ।

    ৮) কাজ চলাকালীন সময়ের মাঝে ঠিকাদার যদি কাজ করতে অপারগ হন কিংবা অন্য কাউকে সাব-কন্ট্রাকে কাজ দেন অথবা কাজ ফেলে চলে যান তাহলে তার চলতি কাজের বিলসহ জমাকৃত সকল সিকিউরিটির টাকা বাজেয়াপ্ত করে তার কাজের “ওয়ার্ক অর্ডার” বাতিল করা হবে ।

    ৯) চলতি কাজের বিল জমা দিতে হলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জমা দিতে হবে :

    ক) চেকের মাধ্যমে সকল বিল প্রদান করা হবে, কোনা প্রকার অগ্রিম কিংবা খোরাকি খরচ প্রদান করা হবে না ( তবে এক্ষেএে সাইট ইন্জিনীয়ার ও প্রজেক্ট ইন্জিনীয়ারের পরামর্শ গ্রহন যোগ্য ),
    খ) যে সকল কাজের নাম বা ধরন উক্ত চুক্তি পএে উল্লেখ করা হয়নি সে সকল কাজের মজুরী উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে চলতি বাজার দরে নির্ধারণ করা হবে,
    গ) চুক্তি পএে উল্লেখিত দরে কাজ করতে হবে, পরবর্তীতে ঠিকাদারের কোন প্রকার দর বৃদ্ধির অযুহাত গ্রহন যোগ্য হবে না কিন্তু বাস্তবে যদি মূল্য বৃদ্ধির পরিমান অস্বাভাবিক হয় তবে সে ক্ষেএে সাইট ইন্জিনীয়ার ও প্রজেক্ট ইন্জিনীয়ারের পরামর্শ গ্রহন যোগ্য হবে,
    ঘ) ঠিকাদারকে প্রজেক্টে অবশ্যই কাজের নিরাপওা মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে এবং এর জন্য সকল প্রকার নিরাপওা মূলক মালামাল কোম্পানী কতৃক সরবরাহ করা হবে । কিন্তু এ সকল মালামাল নষ্ট করলে ঠিকাদারকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং অসাবধানতার কারনে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটলে ঠিকাদারকে এর দায় দায়িত্ব নিতে হবে । তবে মৃত্যুজনিত দুর্ঘটনা হলে সে ক্ষেএে ঠিকাদারকে নির্দীষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে (আলোচনার ভিওিতে),
    ঙ) সাইটে ঠিকাদারের প্রতিদিনের কাজ-কর্ম শেষে সাইট পরিষ্কার করে রাখতে হবে, তবে এক্ষেএে যদি ঠিকাদারের অবহেলার কারণে কোন প্রকার কাজ বা মালামালের ক্ষতি হয় তাহলে ঠিকাদারকে নিজ খরচে তা ঠিক করে দিতে হবে,
    চ) ঠিকাদারকে অবশ্যই কাজের গুণগতমান ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে । এক্ষেএে যদি কোন প্রকার অবহেলা লক্ষ্য করা যায় তাহলে ঠিকাদারকে এর দায় নিতে হবে এবং কোম্পানী চাইলে তার বিরুদ্বে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে,
    ছ) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদারকে তা প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে । কিন্তু ঠিকাদার যদি সাইটে অদক্ষ ও অলস শ্রমিক নিয়োগ দেন ও কাজে অবহেলা করেন এবং নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে কাজ হস্তান্তরে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্তত তিন বার নোটিশ দেওয়া হবে । যদি তাতেও তিনি কাজ করতে ব্যর্থ হন তাহলে তার কাজের অর্ডার স্বয়ংক্রীয় ভাবে বাতিল হয়ে যাবে এবং তার কোন প্রকার আবেদন গ্রহন যোগ্য হবে না,
    জ) সকল সাটারিং এর কাজ শেষ হওয়ার পর সাটারিং এর মালামাল সমূহ ঠিকাদারকে নিজ দায়িত্বে ভবনে নীচতলায় নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে রাখতে হবে,
    ঝ) ঠিকাদারের কোন শ্রমিক যদি অসামাজিক কোন কাজে লিপ্ত হয় সেক্ষেএে ঠিকাদারকে এর দায় গ্রহন করতে হবে কিন্তু অতি গুরুতর অপরাধ হলে কোম্পানী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে,
    ঞ) ১৮ বছরের নীচে কিংবা ৬০ বছরের উদ্ধে কোন শ্রমিক সাইটে কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে না,
    ট) কোম্পানী চাহিলে একই সাইটে একই কাজের জন্য একাধিক ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারবে,
    ঠ) কোম্পানী কতৃক সাইটের সকল প্রকার কিউরিং এর কাজ এবং সিকিউরিটি নিরাপওা ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে,
    ড) ঠিকাদার চাইলে সাইটে সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে শ্রমিক রাখতে এবং রান্নার কাজ করতে পারবে । তবে অবশ্যই ঠিকাদারকে এ ক্ষেএে সকল প্রকার সাবধানতা অবলম্ভন করতে হবে এবং অস্থায়ী লেবারসেডের মালামাল কোম্পানী সরবরাহ করবে,
    ঢ) সকল প্রকার অস্থায়ী ইউটিলিটি সংযোগ কোম্পানী কতৃক প্রদান করা হবে,
    ণ) ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল হওয়ার পর তাকে কিংবা তার কোন শ্রমিককে সাইটে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না । তবে এক্ষেএে ঠিকাদারের কোন পাওনা থাকলে নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত ঠিকাদারের কাজ শেষ হওয়ার পর তার সকল বিল পরিশোধ করার পর যদি কোন টাকা অবশিষ্ট থাকে তাহলে তা ঠিকাদারকে প্রদান করা হবে । কিন্তু নতুন ঠিকাদারের কাজের মজুরী বেশি হলে এর দায়ভার পূর্বের ঠিকাদারকে গ্রহন করতে হবে,
    ত) ঠিকাদারের কোন শ্রমিকের বেতন যদি বকেয়া থাকে সেক্ষেএে কোম্পানীর কোন দায় থাকবে না । এটা ঠিকাদারের ব্যক্তিগত সমস্যা বলে চিহ্নিত হবে,
    থ) ঠিকাদারের সকল শ্রমিককে নিরাপওা ব্যবস্থা গ্রহন করে কাজ করতে হবে, অসুস্থ বা রোগী কিংবা কঠিন রোগে ভুঁগছে এমন কোন শ্রমিক সাইটে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, এক্ষেএে কোম্পানী যদি মনে করে তাহলে শ্রমিকের মেডিকেল সার্টিফিকেট চাইতে পারে,
    দ) প্রথম তলার পরবর্তী সকল তলার দর ২.৫% হারে বৃদ্ধি করা হবে,

    ১০) নিন্মলিখিত কারণে যে কোন সময় কোম্পানী কাজের কার্যাদেশ বাতিল করতে পারবে :

    ক) কাজের মান আশানুরুপ (খারাপ হওয়া) না হওয়া এবং কাজের ধীরগতি হলে,
    খ) ঠিকাদারের লোকজন কোম্পানীর কোন লোকের সাথে খারাপ আচরণ করলে কিবা অবাধ্য হলে,
    গ) কাজের শর্তের বরখেলাপ হলে,
    ঘ) কাজের প্রয়োজনীয় নিরাপওা ব্যবস্থা গ্রহন না করলে বা গ্রহনে ব্যর্থ হলে,
    ঙ) ঠিকাদার কাজ করতে অপারাগতা প্রকাশ করলে কিংবা নতুন কোন লোককে সাব-কন্ট্রাকে কাজ দিলে অথবা কাজে অবহেলা দেখালে এবং কাজ ছেড়ে দিলে তার সকল রানিং বিল বাতিল করে জমাকৃত সিকিউরিটির টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে,

    উপরোক্ত বক্তব্য ও ব্যাখ্যা সমূহ নিজ চোখে দেখে এবং এর অর্থ বুঝে পড়ে ও অবহিত হয়ে স্বাক্ষর প্রদান করিলাম ।

    ঠিকাদার কতৃক যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজ-পএ জমা দিতে হবে :

    ক) সম্প্রতি নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি,
    খ) সম্প্রতি নবায়নকৃত টিন ও ভ্যাট সার্টিফিকেট (যদি থাকে),
    গ) সরকারী দপ্তরে তালিকাভুক্তির প্রমাণপএ (যদি থাকে),
    ঘ) জমাকৃত আর্নেষ্ট ও সিকিউরিটি টাকার প্রমাণপএ,
    ঙ) ব্যাংক কতৃক আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বীকৃতি পএ,
    চ) ক্লাইন লিষ্ট,

    করণীয় :

    # বিবরণ তৈরী ও ঠিকাদার নির্বাচন,
    # দলিলে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর ।

    *

    Post a Comment (0)
    Previous Post Next Post