প্লাষ্টারের খুটিনাটি

    ভবনের অমসৃণ পৃষ্ঠতলকে  মসৃণ, সুষম, পরিষ্কার, এবং দীর্ঘস্থায়ী পৃষ্ঠতলে পরিণত করতে প্লাস্টার প্রয়োজন। অন্যদিকে খারাপ আবহাওয়া ও বৃষ্টির পানি ইটের গাঁথুনির ভিতরে যেন না ঢুকে সেজন্যেও প্লাস্টার অতীব জরুরী। যেখানে তাপ, পানি, বাতাস ইত্যাদির প্রভাব বেশি সেখানে প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়। অনেক সময় প্লাস্টার কেটে বাহির দেয়ালে বিভিন্ন ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন বেশি পুরুত্বের প্লাস্টার।

    প্লাস্টার করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান

    ১। সিমেন্ট

    ২। সাদা বালি (এফ এম ১.৩ থেকে ১.৭)

    ৩। পানি

    ৪। বাঁশ

    ৫। প্লেইন শিট

    ৬। দড়ি

    বালি সিমেন্ট মিশ্রণের অনুপাত ও নিয়ম

    আর.সি.সি.  পৃষ্ঠতলে সিমেন্ট:বালি অনুপাত হচ্ছে ১ঃ৪ এবং ইটের পৃষ্ঠতলে ১:৬। এখন জেনে নেওয়া যাক বালি ও সিমেন্ট মিশ্রণের নিয়মাবলী:

    ১। বালু ও সিমেন্টের গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে এবং প্লাস্টারের বালু ভালো করে চালতে হবে যাতে কোন রকমের ময়লা বালুর সাথে না থাকে। এরপর উপরোক্ত অনুপাতে বালু ও সিমেন্ট মিশিয়ে নিতে হবে।

    ২। বালু ও সিমেন্ট শুকনা অবস্থায় এমনভাবে মিশাতে হবে যেন মশলা দেখতে অভিন্ন লাগে বা ছাই রঙ এর মত মনে হয়। তারপর পরিমিত পানি দিয়ে পুনরায় ভালো করে কোদাল দ্বারা কেটে মিশাতে হবে। মনে রাখতে হবে বানানো মশলা ১ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।

    প্লাস্টার করার পদ্ধতি

    ১। প্লাস্টার শুরু করার পূর্বে প্রথম কাজ হচ্ছে পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণ

    আর.সি.সি. পৃষ্ঠতল

    ক) ভালো করে চিপিং করতে হবে। চিপিং হচ্ছে হাতুড়ির সরু পাশ দিয়ে দেয়ালে খোদাইকরণ।

    খ) অবাঞ্ছিত কোন ময়লা থাকলে তুলে ফেলতে হবে।

    গ) পানি দিয়ে পৃষ্ঠতল ধুয়ে ফেলতে হবে। শুকনা পৃষ্ঠতলে প্লাস্টার করলে তা ফেটে যাবে।

    ব্রিক পৃষ্ঠতল

    ক) ইটের গাঁথুনির পৃষ্ঠতল আগের মতই পরিষ্কার করতে হবে।

    খ) শ্যাওলা বা লবণ থাকলে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

    গ) ইটের গাঁথুনির জয়েন্টগুলি পরিষ্কার করতে হবে।

    ঘ) দেয়ালের পৃষ্ঠতলে জেগে থাকা ইটের অংশ ভালোভাবে কেটে ছেঁটে দেয়াল মোটামুটি সমতলে আনার পর প্লাস্টার লাগানোর উপযুক্ত করা হয়।

    ২। প্লাস্টার করার পূর্বে আর. সি. সি. এবং ইট উভয় পৃষ্ঠতলই ভাল করে পানি দিয়ে ভিজাতে হবে।

    ৩। প্লাস্টার করার পূর্বে সিমেন্ট বালির মিশ্রণ দিয়ে ৩”X৩” @ ৫’ থেকে ৬’  পর পর পায়া করতে হবে।

    ৪। প্রয়োজন হলে পুরুত্ব কমানোর জন্যে পায়া করার সময় দুই/এক জায়গায় ছেঁটে নিতে হবে।

    ৫। আর. সি. সি. পৃষ্ঠতলে গ্রাউটিং (পানিতে শুধু সিমেন্টের মিশ্রণ) ব্যবহার করতে হবে।

    ৬। ভালো প্লাস্টার করতে হলে অবশ্যই পুরুত্ব ঠিক রাখতে হবে।

    ৭। কোন কারণে প্লাস্টারের পুরুত্ব বেড়ে গেলে সেই স্থানে অবশ্যই ডাবল প্লাস্টার সিস্টেম এ প্লাস্টার করতে হবে। অর্থাৎ প্লাস্টারের পুরুত্ব ১.৫” হলে প্রথমবার ১” করে উলম্ব ও অনুভূমিক বরাবর লেভেল ঠিক করে প্লাস্টার করে রাখতে হবে এবং পরের দিন হাফ ইঞ্চি প্লাস্টার করে ফিনিশিং দিতে হবে।

    ৮। কোন অবস্থাতেই ভিজা প্লাস্টারের উপর শুকনা সিমেন্ট বালির মিশ্রণ লেপ্টে দিয়ে প্লাস্টার করা যাবে না। মিস্ত্রিদের ভাষায় একে “ভুরা” বলে।

    ৯। অ্যালুমিনিয়াম পাট্টা ও স্প্রিট লেভেলের সাহায্যে প্লাস্টার এর উলম্ব ও অনুভূমিক পৃষ্ঠতল চেক করতে হবে। প্লাস্টারের কোন সমস্যা থাকলে সাথে সাথে ঠিক করতে হবে।

    ১০। চৌকাঠের চারিদিকে, টাইলসের স্কাটিং এর উপরে এবং এসডিবি বক্সের চারিদিকে ৫মিমি প্রস্থ ৬ মিমি পুরুত্বে গ্রুভ করতে হবে। সানশেড, ড্রপওয়াল এবং ক্যান্টিলেবার অংশে ১০ থেকে ১২ মিমি প্রস্থ এবং ১০ মিমি পুরুত্বে গ্রুভ করতে হবে।

    ১১। সাধারণত স্কাটিং এর জায়গা বাদ দিয়ে প্লাস্টারের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। পরে টাইলস বসিয়ে প্লাস্টার ফিনিশিং দেওয়া হয়।

    ১২। প্লাস্টার করার পর মনে রাখার জন্যে প্লাস্টার এর গায়ে তারিখ লিখে রাখা যেতে পারে।

    ১৩। প্লাস্টার করার ২৪ ঘন্টা পর হতে কমপক্ষে ৭ দিন, দিনে ৩-৪ বার করে কিউরিং করতে হবে।

     

    ফিল্ডে প্লাস্টার চেক

    ১। প্লাস্টারের উপর যদি হাত দিয়ে হাতুড়ির বাড়ি মারা হয় তবে গর্ত হয়ে গেলে সে প্লাস্টার পালটিয়ে আবার প্লাস্টার করতে হবে।

    ২। কলাম, বিম, স্লাব এবং স্লাব ও বিমের মিলিত জায়গায় প্লাস্টার স্ট্রেট আছে কিনা চেক করতে হবে।

    ৩। প্লাস্টারে ক্রাক আসলে তা ফেলে দিয়ে প্রয়োজনে ওয়্যার মেশ দিয়ে আবার প্লাস্টার করতে হবে।

    ৪। প্লাস্টারের মসৃণতল পরীক্ষার জন্যে দেয়ালের প্রান্ত দেশে বাতি ধরলে অসমান প্লাস্টারের ছায়া দেখা যাবে।

    ৫। কাঠের দরজা জানালার চৌকাঠের উপর প্লাস্টার চড়ানো যাবে না।

    ৬। নখ ফুটালে বালি বেড়িয়ে আসলে কিউরিং কম হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

    প্লাস্টার চেক ফরম্যাট

    প্লাস্টারের সমস্যা ও সমাধান:

    ১। প্লাস্টার ঝড়ে পড়া

    কারণ:

    ক।মিক্সার ভালো না হলে ঝড়ে পড়তে পারে।

    খ। ভেজা প্লাস্টারের উপরে শুকনা বালি সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করলে প্লাস্টার ঝড়ে পড়তে পারে।

    গ। বালুতে কয়লার গুঁড়া থাকলে ঝড়ে পড়তে পারে।

    সমাধান: খারাপ প্লাস্টার ফেলে দিয়ে নতুন করে উক্ত স্থানে প্লাস্টার করতে হবে।

    ২। প্লাস্টার ক্রাক করলে

    কারণ:

    ক। আর সি সি ও ব্রিক জয়েন্টে প্লাস্টার ক্র্যাক হতে পারে। কাজ করার সময় উক্ত স্থানে ভালোভাবে মশলা ঢুকাতে হবে।

    খ। প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি হলে ক্র্যাক দেখা দিতে পারে। প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি হলে ডাবল প্লাস্টার সিস্টেমে প্লাস্টার করতে হবে।

    সমাধান:

    ক্রাককৃত প্লাস্টার ফেলে দিয়ে এক্সপান্ডেড মেটাল বসিয়ে পুনরায় প্লাস্টার করতে হবে।

    *

    Post a Comment (0)
    Previous Post Next Post