১. সিলিন্ডার সাইজঃ
- সাধারণত কনক্রীটের কমপ্রেসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষণের জন্য আমরা ৬” X ১২”সিলিন্ডার স্যাম্পল তৈরি করে থাকি।
- তবে ৪” X ৮”সিলিন্ডার স্যাম্পলও তৈরি করা যায়, যা ASTM Standard C31/C31M-03 দ্বারা স্বীকৃত।
- লক্ষনীয় যে, ৪ ” X ৮” কনক্রীট সিলিন্ডার তৈরির সাথে বেশ কিছু উপকারিতা সন্নিহিত। যেমনঃ
একটি ৬” X ১২” সিলিন্ডার তৈরিতে যে পরিমাণ কনক্রীট প্রয়োজন, তা দিয়ে তিনটিরও বেশী ৪ ” X ৮” কনক্রীট সিলিন্ডার তৈরি করাসম্ভব। অর্থাৎ, ৭০% কনক্রীট অপচয় রোধকরা যায়।
- মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ (পাথর, সিমেন্ট , বালু ইত্যাদি) সাশ্রয়ী।
- সংরক্ষণ ও পরবর্তীতে বুয়েট ল্যাবরেটরীতে পরিবহন অত্যন্ত সহজসাধ্য।
- ASTM Standard অনুসারে, ৬” X ১২” সিলিন্ডার ও ৪ ” X ৮” সিলিন্ডার পরীক্ষাকরে প্রাপ্ত কনক্রীট স্ট্রেংথে তেমন কোন পার্থক্যই নেই।
- বুয়েটে ৪ ” X ৮” কনক্রীট সিলিন্ডারের খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
তাই এসব বিচারে গতানুগতিক ৬” X ১২” কনক্রীট সিলিন্ডারের পরিবর্তে ৪ ” X ৮” সিলিন্ডার তৈরি করাই বেশী সুবিধাজনক, প্রাকৃতিক সম্পদ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব।
২. কনস্ট্রাকশনসাইটে সিলিন্ডার প্রস্তুতির পূর্বশর্তঃ
- কাস্টিং এর পূর্বে যে স্থানে কনক্রীট মিক্স করা হয় (রেডী মিক্স কনক্রীটের ক্ষেত্রে, সাইটের যে স্থানে ডেলিভারী দেয়া হয়) সেখানেই সিলিন্ডার তৈরি করতে হবে।
- ড্রাম মিক্সারের ক্ষেত্রে মিশ্রণে প্রয়োজনীয় পানি পুরোপরি যোগ করার পরেই কেবল সিলিন্ডারে কনক্রীট নেয়া যাবে।
- একটি ব্যাচের মাঝামাঝি পর্যায়ে সিলিন্ডারে কনক্রীট নেয়া উচিত।
- সিলিন্ডার তৈরির মৌল্ড গুলো অবশ্যই ওয়াটার লীক প্রুফ হতে হবে।
- শুধু তাই নয়, সিলিন্ডার তৈরি করারআগে কনক্রীটে কোর্স এগ্রিগেটের সর্বোচ্চ সাইজ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। সর্বোচ্চ সাইজ ৬” X ১২” সিলিন্ডারের জন্য ২” (৫০মিলি ও ৪ ” X ৮” সিলিন্ডারের জন্য ১-১/৪” (৩১মিলি)হওয়া বাঞ্চনীয়।
৩. সিলিন্ডার কাস্টিংঃ
সিলিন্ডার প্রস্তুতি এবং কনক্রীটের কমপ্যাকশনের জন্য নিচের ছকটি গুরুত্বপূর্ণঃ
সিলিন্ডার মোল্ড সাইজ | কমপ্যাকশন প্রণালী | |||||
ট্যাম্পিং রড | ভাইব্রেটর | |||||
রডের ডায়া | রডের দৈর্ঘ্য | লেয়ার | প্রতি লেয়ারে রডিং | লেয়ার | প্রতি লেয়ারে ভাইব্রেশন | |
৪ ” X ৮” | ১০ মিলি | ১২” | ২ | ২৫ | ২ | ১ |
৬” X ১২” | ১৬ মিলি | ২০” | ৩ | ২৫ | ২ | ১ |
সাধারনত, সিলিন্ডারে কনক্রীট কমপ্যাকশনের জন্য রড কিংবা ভাইব্রেশন যে কোন পদ্ধতিই অবলম্বন করা যায়, তবে স্ল্যাম্প এর পরিমাণ ১” (২৫মিলি)এর কম হলে ভাইব্রেটরব্যবহার করা উচিত।
ট্যাম্পিং রডের একপ্রান্ত গোলাকার হওয়া বাঞ্চনীয়। সেই সাথে ভাইব্রেটর নজেল পাইপ ৪ ” X ৮” এর ক্ষেত্রে ২৫ মিলি এবং ৬” X ১২” এর ক্ষেত্রে ৩৭ মিলি এর বেশি হওয়া যাবে না
ট্যাম্পিং এর ক্ষেত্রে রডের গোলাকার প্রান্ত দিয়েপ্রতিটি লেয়ার এর উপর চারদিকে সমানভাবে কমপ্যাকশন করতে হবে। সর্বনিম্ন লেয়ারেএমনভাবে ট্যাম্পিং করতে হবে যেন ট্যাম্পিং রড নিচ পর্যন্ত পৌঁছায়। উপরের লেয়ার/লেয়ারগুলোর ক্ষেত্রে ট্যাম্পিং রড কমপ্যাকশন কালে নিচের লেয়ারের ভেতর আনুমানিক ২৫ মিলি প্রবেশ করতে হবে।
ভাইব্রেটর চালানো অবস্থায় সিলিন্ডারে কনক্রীট নেয়া বাঞ্চনীয় নয়। প্রতিটি লেয়ার আলাদাভাবে ডাইব্রেটর দিয়ে কমপ্যাকশন করা উচিত। ডাইব্রেশনের গতি হবে অত্যন্ত ধীর এবং কোন ভাবেই ডাইব্রেটর নজেলটিকে মৌল্ড এর তলা বা সাইডে অধিক সময় রাখা চলবে না, অন্যথায় কিছু এয়ার ভয়েড থেকে যেতে পারে। প্রতি লেয়ারের মাঝামাঝি গভীরতা পর্যন্ত নজেল প্রবেশ করা যেতে পারে এবং শুধুমাত্র ততক্ষণই ভাইব্রেশন করা প্রয়োজন যতক্ষণ না একটি লেয়ারের উপরিভাগ সমতল হয়ে উঠবে। সাধারণত ১০ সেকেন্ডের বেশি ভাইব্রেশন করার প্রয়োজন হয় না। ভাইব্রেশন শেষে নজেলটিকে অত্যন্ত ধীরে উঠিয়ে আনতে হবে।
সম্পূর্ণ সিলিন্ডার মৌল্ড টি ভর্তি হয়ে গেলে ১০-১৫ বার মোল্ড এর বাইরে চারপাশে ভাইব্রেটরের নজেল বা ট্যাম্পিং রড দিয়ে মৃদু আঘাত করতে হবে, যাতে অরৎ াড়রফনা থাকতে পারে। সবশেষে মৌল্ড উপরিভাগের অতিরিক্ত কনক্রীট ফেলে দিয়ে সমান করে দিতে হবে।
একটি কনক্রীটসিলিন্ডার উল্লেখিত নিয়মে সর্বমোট ১৫ মিনিটের মধ্যে কাস্টিং করা বাঞ্চনীয়।
৪. কনক্রীট সিলিন্ডারের পরীক্ষা-পূর্ব কিউরিং ও সংরক্ষণঃ
উপরে উল্লেখিত উপায়ে সিলিন্ডার সমূহকাস্টিং এর পরপরই সেগুলোর পরিচিতমূলক নাম সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে কাস্টিং তারিখ, লোকেশন (বীম, কলাম,পাইলক্যাপ ইত্যাদি) এবং ক্ষেত্রবিশেষে গ্রীড নাম্বার দিয়ে সিলিন্ডারসমূহকে কনক্রীট আধাশক্ত থাকা অবস্থাতেই সূক্ষ্ণ ধারালো কিছু দিয়ে এর উপরিভাগে স্থায়ী ফ্রগমার্ক তৈরী করা যেতে পারে।
সিলিন্ডার কাস্টিং এর অনতিবিলম্ব পরেই সেগুলোকে মৌল্ড এ রাখা অবস্থাতেই ৪৮ঘন্টা পর্যন্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ হতে দূরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ছিদ্রহীনপ্লাস্টিক ব্যাগব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চুনমিশ্রিত পানিতে মৌল্ড সমেত সদ্য প্রস্তুতকৃত সিলিন্ডারগুলোকে ডুবিয়ে রাখাই যথাযথ।
এভাবে ৪৮ঘন্টা প্রাথমিক কিউরিং শেষে মৌল্ড হতে সিলিন্ডারগুলো বের করে, তাদের গায়ে অনপনেয় কালি বা রং দিয়ে স্থায়ীমার্কিং করা উচিত।তবে মোল্ড হতে বের করার ৩০ মিনিটেরমধ্যে সিলিন্ডারগুলোকে চুনমিশ্রিত পানিতে (স্যাচুরেটেড) সম্পূর্ণ ডুবিয়ে রাখতে হবে।
৫. পরীক্ষণের জন্য বুয়েট এ প্রেরণঃ
কিউরিং কৃত সিলিন্ডার সমূহকে নির্দিষ্ট টেস্টিং তারিখের কমপক্ষে ২/১ দিন পূর্বে বুয়েট পুরকৌশল বিভাগের কনক্রীট ল্যাবরেটরিতে পৌঁছে দিতে হবে। তারিখ হবার বহুদিন পূর্বে সিলিন্ডারগুলো বুয়েটে সরবরাহ করা সমীচীন নয়।
সিলিন্ডার গুলোকে একত্রে অভেদ্য কাপড়ে বা প্লাষ্টিকব্যাগে মুড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন ব্যক্তির সই সমেত একটি ফরোয়ার্ডিং চিঠির এর উপর সিল-গালা করে বুয়েটে এ সরবরাহ করা উচিত, যাতে করে প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় থাকে। অন্যথায় সিলিন্ডারগুলো আনসীলড বলে গণ্য হবে।
সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষনের আবেদন জানিয়ে ডিরেক্টর, বি.আর.টি.সি, বুয়েট বরাবর আবেদনপত্রে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ উল্লেখ করা অত্যন্ত জরুরীঃ
(১) কাস্টিং ডেট
(২) লোকেশন (বীম, কলাম, রিটেইনিং ওয়ালইত্যাদি)
(৩) গ্রীড নং (যদি থাকে)
(৪) মিক্স অনুপাত
(৫) এগ্রিগেট টাইপ (ব্রীক/স্টোন চিপস, সিঙ্গেলস)
(৬) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/প্রকৌশলীর ফোন নম্বর
(৭) সিলিন্ডারের সংখ্যা ও সাইজ