নিজের বাড়ি তৈরীর আগে করণীয়


    বাসস্থান আমাদের তৃতীয় মৌলিক চাহিদা। যার বাপ-দাদার বা নিজের এক খন্ড জমি আছে সবাই চায় সেখানে নিজের মতো করে সুন্দর একটি বাড়ি বানাতে। পৃথিবীতে টোকিওর পর জমির দাম ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমাদের বাঙালী টিপিক্যাল নেচারের জন্য আমরা বাড়ি বানানোর সময় প্রফেসনালদের সাহায্য নেই না। প্রতিটি বাড়িওয়ালার ভাব হচ্ছে হালার ইন্জিনিয়ার কিছুই জানে না আমিই বেশি জানি। এই বেশি জানার ফলে পরবর্তীতে দেখা যায় বাড়ি তৈরীর পর নানা রকম ইউটিলিটি সমস্যা, মোডিফিকেশন চলে, ভাঙাভাঙি, জোড়াতালি চলে। ফলে বাড়িটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে কিম্ভুতকিমাকার রুপ ধারন করে। আসুন দেখী একটি বাড়ি তৈরীর জন্য কার্যক্রমের ধাপ কি?


    ১. প্রথমেই ফাইনান্স এর কথা ভাবুন। অর্থাৎ টাকা কোথা হতে আসবে তা নিশ্চিত করুন। এর জন্য দরকার প্রিলিমিনারী এস্টিমেশন। এর জন্য অভিজ্ঞ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারের কাছে যান।

    ২. প্লানিং করুন। পুরো বাড়ি একবারে করবেন নাকি দুই তলা করে পরে বাকি চার তলা করবেন। গ্যারেজ কার পার্কিং কয়টি রাখবেন। বাড়িটির অকুপেন্সি কেমন হবে আবাসিক হবে নাকি স্কুল হবে, লিফ্ট, জেনারেটর, সাব স্টেশনের প্রভিশন রাখবেন কি রাখবেন না, আশেপাশে ভবিষতে কি রকমের ইমারত নির্মিত হতে পারে, ছাদে বাগান হবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ৩. ভালো স্থপতি দিয়ে বাড়ির প্লান করিয়ে নিন। মনে রাখবেন জমি যত ছোট হোক আর তেড়া বেকা হোক। একজন ভালো স্থপতি সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। জমির প্রতির টুকরার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। এ ছাড়াও স্থপতিকে দিয়ে বাড়ির ফার্ণিচার প্লান ও ইনটেরিওর ডেকোনেশন প্লান করিয়ে নিতে পারেন। 


    ৪. প্লান পাস হলে সয়েল টেষ্ট করাবেন। হুট করে পাইলিং-এ যাবেন না। সয়ের টেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে অভিজ্ঞ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারের সাথে আলাপ করুন।

    ৫. বিল্ডিং-এর স্ট্যাকচারাল ডিজাইনের জন্য অভিজ্ঞ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারের কাছে যান। ভূমিকম্প নিয়া ইদানিং সবাই বেশি চিন্তিত। স্ট্যাকচারাল সিসমিক লোডের জন্য ডিজাইন করা যায়। 



    ৬. প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন অভিজ্ঞ ইন্জ্ঞিনিয়ার দ্বারা করে নিন। মনে রাখবেন বাড়ি তৈরির পর প্রাথমিক সমস্যা গুলো প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক ওয়ারিং-এই দেখা যায়। ফলে দেখা যায় ভাঙচুর করতে হচ্ছে বা প্রতিদিন একটি বিরক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এইটা বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


    ৭. ডিটেইল বিল অফ কোয়ান্টিটি বা বি ও কিউ তৈরী করুন। এবং আপনার পূর্বের আনুমানিক ব্যায়ের সাথে তুলনা করুন। যদি ব্যায় বেড়ে যায় তবে ডিজাইন বা প্লানে কিছু পরিবর্তন এনে ব্যায় কমাতে পারেন। 

    ৮. কনস্ট্রাকশন-এ শুধু মাত্র কন্ট্রাকটরের উপর নির্ভরশীল না হয়ে একজন সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারকে ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম সুপারভিশনে রাখুন। 

    লজিস্টিক কর্জকর্ম সম্পর্কে কিছু বললাম না। এ দেশে লজিস্টিক কাজকর্ম সিষ্টেম মেনে চলে না। বাড়ি তৈরীর জন্য সুষ্ঠু প্লানিং আর ডিজাইন না করলে পরবর্তীতে নানা অসুবিধার সম্মুখ্খীন হতে হয়। তাই উপযুক্ত প্রফেশনালদের সাথে আলাপ করে বাড়ি তৈরীর কাজে হাত দেবেন। এতে তাদের যা রিমুনেশন দিতে হবে তা আপনার মোট ব্যায়ের বড়োজোর ১-২% হতে পারে।

    1 Comments

    1. খুব প্রয়োজনীয় ছিলো পোষ্ট টি।

      ReplyDelete
    Post a Comment
    Previous Post Next Post